অসহযোগ আন্দোলন কি?
অসহযোগ আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯২০-১৯২২ সালে পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করা, যেমন সরকারি স্কুল, কলেজ, আদালত, এবং চাকরি থেকে বিরত থাকা, ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা, এবং দেশীয় শিল্পের ব্যবহার বাড়ানো।
অসহযোগ আন্দোলন ছিল অহিংস প্রতিরোধের একটি ফর্ম যা গান্ধীর সত্যাগ্রহ নীতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী জনমত তৈরি হয়। যদিও এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সফল হয়নি এবং কিছু সহিংস ঘটনার কারণে গান্ধী এটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন, কিন্তু এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের পথকে মসৃণ করেছিল এবং ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও একতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন বলতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনকে বোঝায়, যা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায় এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা।
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতে বলেন।
এই আন্দোলনের মূল দিকগুলো ছিল:
- সমস্ত সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা।
- কর এবং অন্যান্য সরকারি রাজস্ব পরিশোধ থেকে বিরত থাকা।
- সরকারি নির্দেশনা এবং আদেশ অমান্য করা।
- সারাদেশে ধর্মঘট এবং হরতাল পালন।
অসহযোগ আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার সামরিক অভিযান চালায়, যা ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল
অসহযোগ আন্দোলন ছিল একটি গণপ্রতিরোধ আন্দোলন যা বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক কারণের ফলস্বরূপ গড়ে উঠেছিল। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল নিচে তুলে ধরা হলো:
কারণ
- রাজনৈতিক অসন্তোষ: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেও কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। এই ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
- অসাম্য ও শোষণ: পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শোষিত হচ্ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা অনেক কম ছিল।
- ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য: উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া এবং বাংলা ভাষার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
- রাজনৈতিক নিপীড়ন: পাকিস্তান সরকার রাজনৈতিক নেতাদের উপর নিপীড়ন চালায় এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করে, যা আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে।
- অধিকার বঞ্চনা: পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এসব বঞ্চনা এবং বৈষম্যের প্রতিকার চেয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
ফলাফল
- গণআন্দোলন ও প্রতিরোধ: অসহযোগ আন্দোলনের ডাকের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক ধর্মঘট, হরতাল এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। জনগণ ব্যাপকভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
- সামরিক অভিযান: ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট চালায়, যার ফলে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু হয়।
- মুক্তিযুদ্ধের সূচনা: অসহযোগ আন্দোলন এবং সামরিক অভিযানের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, যা ৯ মাস ধরে চলে।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা: মুক্তিযুদ্ধের ফলস্বরূপ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতি: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করে এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
- সাংস্কৃতিক ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ: আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ঘটে।
মূলকথা :- আসা করি অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝানো হয়েছে পূর্বে সংঘটিত সকল অসহযোগ আন্দোলন থেকে ধারনা পেয়েছে।
Tag:অসহযোগ আন্দোলন কি? ( A To Z) বিস্তারিত আলোচনা
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)