আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক কোরবানি সম্পর্কে অসংখ্য কোরআনের আয়াত ও হাদিস রয়েছে। তার মধ্যে থেকে নিচে আমরা কিছু আয়াত ও হাদিস তুলে ধরতেছি।
কোরবানির আয়াত ও হাদিস
হযরত আদম (আঃ) এর সেই যুগ থেকেই কোরবানি দেয়ার বিধান চালু হয়েছিল। যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। তবে বর্তমান মুসলিম অধ্যুসিত সমাজে যে কোরবানি দেয়ার প্রচলন রয়েছে সেটা মূলত জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দেখানো পথ থেকেই। আমাদের অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা আছেন যারা কোরবানির আয়াত ও হাদিস জানতে চান। তাই আজকে আমরা কোরবানির আয়াত ও হাদিস তোমাদের মাঝে তুলে ধরতেছি।
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
১ নাম্ভার:-
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ لُحُوۡمُہَا وَ لَا دِمَآؤُہَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَہَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۳۷﴾
আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা ওগুলির গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলিকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এ জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদেরকে। সুরা হজ্জ আয়াত:- ৩৭
২ নাম্ভার:-
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰہِ ؕ فَاِنۡ اُحۡصِرۡتُمۡ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡہَدۡیِ ۚ وَ لَا تَحۡلِقُوۡا رُءُوۡسَکُمۡ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡہَدۡیُ مَحِلَّہٗ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ بِہٖۤ اَذًی مِّنۡ رَّاۡسِہٖ فَفِدۡیَۃٌ مِّنۡ صِیَامٍ اَوۡ صَدَقَۃٍ اَوۡ نُسُکٍ ۚ فَاِذَاۤ اَمِنۡتُمۡ ٝ فَمَنۡ تَمَتَّعَ بِالۡعُمۡرَۃِ اِلَی الۡحَجِّ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡہَدۡیِ ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ فِی الۡحَجِّ وَ سَبۡعَۃٍ اِذَا رَجَعۡتُمۡ ؕ تِلۡکَ عَشَرَۃٌ کَامِلَۃٌ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ لَّمۡ یَکُنۡ اَہۡلُہٗ حَاضِرِی الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۱۹۶﴾٪
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হাজ্জ ও ‘ওমরাহ সম্পূর্ণ কর; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও তাহলে যা সহজ প্রাপ্র তাই উৎসর্গ কর এবং কুরবানীর জন্তুগুলি স্বস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মস্তক মুন্ডন করনা। কিন্তু কেহ যদি তোমাদের মধ্যে পীড়িত হয়, অথবা তার মস্তিস্ক যন্ত্রনাগ্রস্ত হয় তাহলে সে সিয়াম কিংবা সাদাকাহ অথবা কুরবানী দ্বারা ওর বিনিময় করবে, অতঃপর যখন তোমরা শান্তিতে থাকো তখন যে ব্যক্তি ওমরাহ্ ও হাজ্জ একত্রে কামনা করে তাহলে যা সহজ প্রাপ্য তা’ই উৎসর্গ করবে। কিন্তু কেহ যদি তা প্রাপ্ত না হয় তাহলে হাজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা প্রত্যাবর্তিত হও তখন সাত দিন - এই পূর্ণ দশ দিন সিয়াম পালন করবে; এটা তারই জন্য - যার পরিজন পবিত্রতম মাসজিদে উপস্থিত না থাকে এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখ যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা। (সুরা বাকারা আয়াত:-১৯৬
৩ নাম্ভার:-
وَ اتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِہِمَا وَ لَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰہُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۲۷﴾
তুমি তাদেরকে (আহলে কিতাবদেরকে) আদমের পুত্রদ্বয়ের (হাবীল ও কাবীলের) ঘটনা সঠিকভাবে পাঠ করে শুনিয়ে দাও; যখন তারা উভয়েই এক একটি কুরবানী উপস্থিত করল এবং তন্মধ্য হতে একজনের (হাবীলের) কুরবানী কবূল হল এবং অপরজনের কবূল হলনা। অপরজন বলতে লাগলঃ আমি তোমাকে নিশ্চয়ই হত্যা করব; প্রথমজন বললঃ আল্লাহ আল্লাহভীরুদের ‘আমলই কবূল করে থাকেন। (সুরা মায়েদা আয়াত: ২৭)
৪ নাম্ভার:-
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲﴾ۙ
তুমি বলে দাওঃ আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রাব্ব আল্লাহর জন্য। (সুরা আনআম আয়াত;- ১৬২)
৫ নাম্ভার:-
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَلَہٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ ﴿ۙ۳۴﴾
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুস্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মা‘বূদ একই মা‘বূদ, সুতরাং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পন কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতজনদেরকে, (সুরা হজ্জ আয়াত:-৩৪)
৬ নাম্ভার:-
وَ الۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰہَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰہِ لَکُمۡ فِیۡہَا خَیۡرٌ ٭ۖ فَاذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلَیۡہَا صَوَآفَّ ۚ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُنُوۡبُہَا فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰہَا لَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۳۶﴾
এবং উৎসর্গীকৃত উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহর নিদর্শনগুলির অন্যতম; তোমাদের জন্য তাতে মঙ্গল রয়েছে; সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় ওগুলির উপর তোমরা আল্লাহর নাম নাও। যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাঞ্চাকারী অভাবগ্রস্তকে। এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা হজ্জ আয়াত;-৩৬)
৭ নাম্ভার:-
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَہُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾
অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবাহ করছি, এখন তোমার অভিমত কি, বল। সে বললঃ হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। (সুরা সাফফাত আয়াত:১০২)
৮ নাম্ভার:-
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡبَلٰٓـؤُا الۡمُبِیۡنُ - وَ فَدَیۡنٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِیۡمٍ - وَ تَرَکۡنَا عَلَیۡهِ فِی الۡاٰخِرِیۡنَ - سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ - کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান জবেহের (কোরবানির) বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম। আর তার জন্য আমি পরবর্তীদের মধ্যে সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি। ইবরাহীমের প্রতি সালাম।এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ১০৬-১১০)
৯ নাম্ভার:-
فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ ؕ﴿۲﴾
সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। (সুরা কাওসার আয়াত:১০২
কোরবানি সম্পর্কে হাদিস
কোরবানি প্রসঙ্গে নবী করিম (সা:) এর অসংখ্য হাদিস রয়েছে। তার মধ্য থেকে কিছু কোরবানি সম্পর্কে হাদিস নিচে তুলে ধরা হলো:-
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সঃ) দুইটি সাদা-কালো রঙের (বড় শিং বিশিষ্ট) নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুইটির গর্দানে পা রেখে “বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার” বললেন, অতঃপর নিজ হাতে দুম্বা দুইটি জবেহ করলেন। (বুখারি, হাদিসঃ ২/৮৩৪)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেনঃ নবী করিম (সা.) ঈদগাহে কোরবানির পশু জবেহ করতেন এবং নহর করতেন। (বুখারি, হাদিসঃ ২/৮৩৩)
অতএব কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম হলো- গরু, ছাগল ও দুম্বা জবেহ করা হবে এবং উট নহর করা হবে। নবী করিম (সঃ) এমনটাই করেছেন।
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সবকিছুর উপর অনুগ্রহ অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা জবেহ করবে— তো উত্তম পদ্ধতিতেই জবেহ করো। প্রত্যেকে তার জবেহ করার ছুরিতে শান/ধার দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২/১৫২)
হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেন, তোমরা (কোরবানিতে) ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী ভেড়া/দুম্বা জবেহ করিতে পারিবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২/১৫৫)
হযরত বারা ইবনে আজিব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। এবং তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে (কোরবানীর দিনে) প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি সম্পন্ন করা। সুতরাং যে এভাবে করবে— তার কোরবানি আমাদের তরিকা (পদ্ধতি) মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে (তার কুরবানি তরিকা মতো হয়নি) অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, (আল্লাহর তায়ালার জন্য উৎসর্গিত) কোরবানি নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২/৮৩২)
অন্য এক হাদিসে আছে কোনো কোনো সাহাবী ভুলক্রমে ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে কোরবানি সম্পন্ন করেছিলেন। নবী করীম হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাদের পুনরায় কোরবানি করার আদেশ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২/৮২৭)
হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সঃ) তিনরাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর তিনি (অবকাশ দিয়ে) বলেন, খাও, পাথেয় হিসাবে সাথে করে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখো। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২/১৫৮)
উম্মুল মুমিনিন মা আয়েশা (রাঃ) এর এক বর্ণনায় আছে যে, খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা করো। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২/১৫৮)
Tag:কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, কোরবানির আয়াত ও হাদিস, কোরবানি সম্পর্কে হাদিস
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)