Class 9/Nine 6th Week Assignment Answer BGS
৯ম/নবম শ্রেণির এসাইনমেন্ট ২০২২ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ষষ্ঠ সপ্তাহ
৯ম শ্রেণীর ৬ষ্ট সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্ট সমাধান /উত্তর ২০২২
শিখনফল
১। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারবে।
৩। ঐতিহাসিক ছয় দফার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে ৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে।
নিম্নে তভাষা আন্দোলনের পটভূমি ততুলে ধরা তহলাে-
১. ভাষার উপর আঘাত
পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম তথেকেই পশ্চিম তপাকিস্তনি তশাসকগােষ্ঠীর অনুদার তদৃষ্টিভঙ্গি তলক্ষ করা যায়। জাতির তজনক বলে খ্যাত তমুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব তপাকিস্তানকে তার তন্যায্য অধিকার হতে তবঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে তপ্রথম ভাষার তউপর আঘাত হানেন। বাঙালিরা তপাকিস্তানে ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যাগরিষ্ঠের তভাষা বাংলাকে সম্পূর্ণ তউপেক্ষা করে সংখ্যালঘিষ্ঠের ভাষা উর্দুকে তপ্রাধান্য দিতে গিয়ে তিনি তপাকিস্তানের জন্য চরম বিপর্যয় তডেকে আনেন।
বাঙালিদের ভাষাগত তস্বাধীনতা হরণের তপ্রথম প্রকাশ লক্ষ করা যায় তজিন্নাহর ঘােষণাতে। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকায় জিন্নাহ প্রকাশ্য জনসভায় ঘােষণা করেন যে, “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে তপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।” তার এ তঘােষণায় বাঙালি তজনসাধারণ প্রতিবাদে তফেটে পড়েন। তারা তদাবি জানাল যে, তউর্দু ও বাংলা তউভয়ই পাকিস্তানের তরাষ্ট্রভাষা হবে। কারণ পাকিস্তানের তসংখ্যাগরিষ্ঠ লােক পূর্ব তবাংলায় বাস করে এবং ততারা বাংলা ভাষায় কথা বলে। কিন্তু তপশ্চিমা শাসকগােষ্ঠী তা মেনে নেয় নি।
২. আঞ্চলিক আন্দোলনের সূচনা
জিন্নাহর ঘােষণাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ তপাকিস্তানে ব্যাপক তােলপাড় শুরু হয়। বাঙালিরা জিন্নাহর ঘােষণাকে অগণতান্ত্রিক তও স্বেচ্ছাচারমূলক বলে ঘােষণা করে। কিন্তু জিন্নাহ বুঝতে পারেন তযে, মনের অজান্তে ঐদিন তিনি পাকিস্তানের উভয় তঅঞ্চলের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করলেন তএবং এটা পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পতনের পথ তপ্রশস্ত করল। এ সময় হতেই বাঙালি জাতি মাতৃভাষাকে তরাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায় (বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা-পরিণত করার দাবির সাথেজাতীয় চেতনা বেড়ে চলে এবং এতে আঞ্চলিক আন্দোলন বেগবান হতে থাকে।
৩. খাজা নাজিমউদ্দিনের ঘোষণা
লিয়াকত আলী খান ১৯৫১ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর খাজা নাজিমউদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। বেআইনি ও অগণতান্সিক ছিল তাঁর এ নিযুক্তি। খাজা নাজিমউদ্দিন শাসনকার্যে ছিলেন অদক্ষ। তাই শাসনতান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। খাজা নাজিমউদ্দিন ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি কায়েদে আজমের অনুকরণে ঢাকার এক জনসভায় ঘােষণা করেন যে, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” তার এ ঘােষণায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে। ফলে বাংলা ভাষার আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে।
৪. রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে খাজা নাজিমউদ্দিনের ঘােষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ধর্মঘট পালিতন হয়। পরে সর্বদলীয় রাষ্ট্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । জনাব আবুল হাশিম, জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব কামরুদ্দীন আহমদ ও জনাব তােয়াহা প্রমুখ এর সদস্য ছিলেন।
৫. ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ
ভাষা আন্দোলনের সাহসী সৈনিক বাংলার গ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবসের ঘােষণা দেয়। অপরদিকে, একই দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) ছিল পাকিস্তান সরকারের বাজেট অধিবেশনের দিন। ছাত্রদের কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার পূর্বেই ১৪৪ ধারা জারি করলে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্ররা এক জরুরি বৈঠকে সমবেত হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ঐ দিন সর্বাত্মক হরতাল পালনের মধ্যদিয়ে ছাত্ররা প্রতি দশজনের একটি মিছিল বের করে।
ভাষা আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য পুলিশ বাহিনী মাঠে নামে। পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। যখন দেখা যায়, একপর্যায়ে এগুলাে কোনাে কাজ করতে পারছে না তখন পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। ফলে বরকত, সালাম, জব্বার ও রফিকহ নাম না জানা আরােও অনেকেই নিহত হয়।
ভাষা আন্দোলন সমর্থন করার ব্যাপারে মওলানা ভাসানী, জনাব আবুল হাশিম, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ, খন্দকার মুশতাক আহমদ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, জনাব অলি আহাদ, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ও এম ওসমান আলী প্রমুখকে গ্রেফতার করা হয়। ফলে ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা অরও বাড়তে থাকে।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
১৯৫৪ সালের তপ্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন যুক্তপাকিস্তানের প্রথম তনির্বাচন (পূর্ব পাকিস্তানে)। ১৯৫১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তকথা থাকলেও পাক সরকার নির্বাচন তদিতে পড়িমসি করে। তাদের তধারণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তভয়াবহতা পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে ব্যাপক তপ্রভাব ফেলবে। কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ তনির্বাচনে পরাজিত হবে। সে তজন্যে ক্ষমতাসীন মুসলিম সরকার তনির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব তকরে।
তারা চেয়েছিল তপূর্ব বাংলায় তাদের তাঁবেদার তসরকার গঠিত হবে। তাদের শাসনক্ষমতা তঅক্ষুণ্ণ থাকবে। সে প্রচেষ্টার কৌশল হিসেবে ত১৯৫২ সালে পূর্ববাংলার প্রাণপ্রিয় তমাতৃভাষা বাংলার উপর আক্রমণ চালায়। ত১৯৪০ সালের পাকিস্তানে ঐতিহাসিক লাহোর তপ্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রস্তাবের তভিত্তিতে পাকিস্তান গঠন করার তকথা থাকলেও পরবর্তীকালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ত‘দ্বিজাতিতত্ত্বের’ ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। লাহোর প্রস্তাব তঅনুযায়ী ‘একাধিক রাষ্ট্র’ গঠিত হলে পূর্ববাংলা প্রথমেই স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারত। কিন্তু দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ধর্মীয় ঐক্যের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠন করা হয়।
দেশ বিভক্তির পর থেকে পূর্ববাংলার জনগণ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অধিকারসমৃদ্ধ সুখী ও স্বাধীন জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখে আসছিল। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। তাদের কার্যকলাপে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থরক্ষা করতে তারা সম্পূর্ণ নারাজ। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিতে তারা গড়িমসি করে। কিন্তু পূর্ববাংলার নেতৃবৃন্দের চাপের মুখে মোহাম্মদ আলীর তৎকালীন সরকার ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।
পরিশেষে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় বাঙালি জাতির জীবনে এক স্মরণীয় অধ্যায়। এ নির্বাচনে জয় লাভ করে এদেশবাসী অধিকার সচেতন হয়ে উঠে। নির্বাচনের ফলাফল বাঙালিকে রাজনীতি সচেতন ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।
ছয় দফার গুরুত্ব
পাকিস্তান তঔপনিবেশিক শাসনামলে পূর্ব বাংলায় তযত রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণীত তহয়েছে ৬ দফা ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে তগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় তপরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। তশেখ মুজিবুর রহমান তার ছয়দফা তদাবির মধ্যে এমন সব তদাবি উত্থাপন করেছেন যা বাঙালিকে তএকটি আলাদা জাতিসত্তা হিসেবে তুলে তধরেছে। এ কারণে ৬ দফা কর্মসূচিকে তবাঙালির বাচার দাবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ তকরতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির তইতিহাসে ৬ দফার গুরুত্ব ও ততাৎপর্য সম্পর্কে নিম্নে তআলােচনা করা হলাে-
১. বাঙালির মুক্তিসনদ : পশ্চিম তপাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠির অত্যাচার, নিপীড়ন তএবং শােষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ৬ তদফা দাবি ছিল বাঙালির তমুক্তির সনদ। কারণ পরবর্তীকালে ৬ দফার তউপর ভিত্তি করে বাঙালি জাতি ততাদের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে তআনতে সক্ষম হয়। ৬ দফাকে কেন্দ্র তকরে মূলত বাঙালিদের মধ্যে একটি তনবজাগরণের সৃষ্টি যা বাঙালির মুক্তির তজন্য একান্ত অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে বাঙালির জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ৬ দফা বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ এবং বাংলার স্বাধীনতার গ্যারান্টি।
২.শােষণ ও বৈষম্যের প্রতিবাদ : ৬ দফা দাবি ছিল পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমাগােষ্ঠি কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শােষণের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। কারণ এর পূর্বে বাঙালি জাতির কোনাে নেতা এমন সুসংগঠিত দাবি বাঙালির জাতির সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন নি। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন কালে বলেছেন “আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি।’ সত্যিই শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে বাঁচাতে ছয় দফা কর্মসূচি জনসম্মুখে তুলে ধরেন।
৩. বাঙালি জাতীয়তাবাদের সুদৃঢ় বহিঃপ্রকাশ : ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সুদৃঢ় ঘটেছিল। এ আন্দোলনের সময় সমগ্র বাঙালি জাতি একটি প্লাটফর্মের অধীনে চলে আসে। ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার এক মূর্ত প্রতীক এবং এ কারণেই এর প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি জাতি ১৯৬৯ এ ঝাপিয়ে পড়েছিল।
৪. স্বায়ত্তশাসনের দাবি : ৬ দফা দাবির মাধ্যমে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানকে একটি পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি পেশ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচারণার ফলে ৬ দফার দাবি অতি শীঘ্র সমগ্র । বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে। স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের ঢেউ সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
৫.স্বাধিকার আন্দোলন : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালিরা স্বাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করে। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম দিকে এ আন্দোলন তেমন পূর্ণতা পায় নি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ৬ দফা দাবি বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধিকার আদায়ের অপরিসীম শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। যেসব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল তার একটিও বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাঙালি জাতি ৬ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
৬. ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রভাব : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৬ দফার প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ছয় দফা কর্মসূচিকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সন্নিবেশ করে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তথা শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনে জয়লাভ করলে জনগণকে ৬ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। ফলে আওয়ামী লীগ উক্ত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
৭. আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি : আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম ৬ দফা দাবি পাকিস্তান সরকারের নিকট তুলে ধরেন। তার সুযােগ্য নেতৃত্বে ৬ দফা দাবি সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। ৬ দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।
৮. স্বাধীনতা আন্দোলন : ৬ দফাকে কেন্দ্র করে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনের দাবি শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ৬ দফা আন্দোলন ছিল একটি গণমুখি আন্দোলন। ৬ দফা আদায়ের জন্য বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
৯. শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা : ৬ দফা কর্মসূচি প্রণয়নের ফলে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। কারণ ৬ দফা প্রণয়নে যিনি একক ভূমিকা পালন করেন তিনি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৬ দফা কর্মসূচি প্রণয়নের ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আধিপত্য সৃষ্টি হয়। তিনি কলকাতা, ঢাকাসহ সারাদেশে রাজনীতিতে যে খ্যাতি পেয়েছেন তার চাইতে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন। ৬ দফা আন্দোলনের সিড়ি বেয়ে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি রচনা করেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ৬ দফা কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। অনেকে এটাকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ম্যাগনাকার্টা বলে অভিহিত করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই বলেছেন, ‘৬ দফা দাবি ছিল বাংলাদেশের বাঁচার দাবি।” (Six Point demand was the element for the survival of the Bangladesh.)
৭ ই মার্চের গুরুত্বপূর্ণ ভাষন
১৯৭১ সালেত মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই তমার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে তঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত তকরে। কোনো ধরনের আপোসের তপথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর তআহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের তস্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ তমানুষজীবন উৎসর্গ করে, যা তবিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। তশ্রেষ্ঠ ভাষণের আরেকটি তবৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নেতৃত্বের সর্বোচ্চ তদেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে তস্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে ত¯পষ্ট দিকনির্দেশনা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চেরত ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল তপাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসনত-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে তবাঙালির জাতীয় মুক্তি। এ ভাষণের তঅপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সময়ের তপরিসীমায় গ-িবদ্ধ না তথেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী। তএ ভাষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তএর কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী তও বাক্যবিন্যাস, যা হয়ে ওঠে তগীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত। যে কোনো তশ্রেষ্ঠ ভাষণই উত্থিত হয় বিদ্যমান তপরিস্থিতি থেকে, ফলে তা তাৎক্ষণিক, তস্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয় উৎসারিত বলা যায়ত। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও তছিল তাই, যা লিখিত ছিল না। এ ভাষণের তঅপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি তআকারে ছিল নাতিদীর্ঘ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেভাষণ ও বক্তব্য প্রদান করা হয়। তবে সকল ভাষণ বা বক্তব্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এক রকম হয় না। যে ভাষণে জাতি দিক নির্দেশনা পায়, জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়, এমনকি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনতে পারে বিশ্বের মানচিত্রে; এমন ধরনের ভাষণ ব্যতিক্রমী ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চেরেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণ অনন্য। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ, সম্মোহনী, তেজস্বিতা, বাগ্মীতা, দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা, সুদুরপ্রসারী চিন্তা, পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয়তার নিরিখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সক্ষমতায় এ ভাষণ ছিল ব্যতিক্রমী। এ ভাষণ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানেরআবাল বৃদ্ধ বণিতাকে এক পতাকাতলে সমবেত করে।এ ভাষণ ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তীতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছে দেয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে ঢ়াকার রেসকোর্স ময়দানে বিকাল৩.২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে ১৮ মিনিটব্যাপী যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে পরতে মিশে আছে জাতির পিতার অসামান্য অবদান। তাঁর অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর ওই ভাষণে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকে একসূত্রে গেঁথে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা। সঙ্গত কারণে এদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।কারণ ৭ই মার্চের ভাষণের পিছনে রয়েছে দীর্ঘ আথ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস। সম্ভবতপৃথিবীতে অন্য কোন ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ঐ ভাষণের দিক-নির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্র কঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য। এ ভাষণে তাঁর তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। এ ভাষণমানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলে। এভাষণ ছিল বহুমাত্রিকতায় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এটিই স্বীকৃত হয়েছে। গণতন্ত্র, উচ্চ মানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম,জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা জোগাবে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রনায়ক, সমরকুশলী- সবার জন্যই এ ভাষণে অনেক কিছু শিক্ষণীয়।
টাগঃClass 9/Nine 6th Week Assignment Answer BGS || ৯ম/নবম শ্রেণির এসাইনমেন্ট ২০২২ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ষষ্ঠ সপ্তাহ | ৯ম শ্রেণীর ৬ষ্ট সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এসাইনমেন্ট সমাধান /উত্তর ২০২২
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)