এইচএসসি এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ সালের সমাজবিজ্ঞান (৬ষ্ট সপ্তাহ) এসাইনমেন্ট -৪
বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ - গােষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এ দেশের অমূল্য সম্পদ । সাংস্কৃতিক নানা উপাদান এসব জাতিগােষ্ঠীর সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ - গােষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার । দেশের সংখ্যাগুরু বা কেন্দ্রের মানুষের উচিত প্রান্তের বা সংখ্যায় কম মানুষের সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে আসা । বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ( বিআইআইএসএস ) আয়ােজনে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন । আলােচকেরা । বিআইআইএসএস অডিটোরিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় ।। | জাতীয় সংস্কৃতি বিকাশে ক্ষুদ্র নৃ - গােষ্ঠী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রতিবন্ধকতা ' শীর্ষক । সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ ইউনিভার্সি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আনােয়ার হােসেন । তিনি বলেন , কেন্দ্র ও প্রান্তের মধ্যে বিভাজন থাকাটা কাম্য নয় । এ সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ না হলে রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় । এ ক্ষেত্রে প্রান্তের চেয়ে কেন্দ্রের দায়িত্ব বেশি ।
২.বাংলাদেশের মারমা নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয়:
বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা ১৬ শ শতাব্দীর দিকে অভিবাসন শুরু হলেও মূল অভিবাসন | শুরু হয় আরাকান সম্রাট মাংখামাং কতৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিয়ােগপ্রাপ্ত ৪৬ তম । | ভাইসরয় মংপ্রু ( মংচপ্যাইং ) এর আমলে । কথিত আছে , ১৫৯৯ খ্রীষ্টাব্দে আরাকান সম্রাট মাংরাজাগ্রী বােগােহ্ ( পেগু ) সম্রাট নাইদাব্রাং এর রাজ্য হাইসাওয়াদী পতন ঘটিয়ে সম্রাটের রাজকণ্যা খাইমাহাং ও তার রাজপুত্র মংচপুরু এবং পেগু রাজ্যের বাসিন্দাসহ ৩৩ হাজার পরাজিত সৈন্যকে স্লাকউ রাজ্য নিয়ে এসে কালাদাং নামক স্হানে পুনর্বাসিত করা হয়। পরবর্তীতে সম্রাট মাংরাজাগ্রী
রাজকুমারী খাইমাহাংকে বিয়ে করেন । রাজকুমার মংচপ্রু। যৌবনে পদার্পন করলে নিজ মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করান । ১৬১২ সালে আরাকান সম্রাট মাংরাজাগ্রী মৃত্যুবরন করলে সেই স্থলে রাজকুমার মাংখামাং অভিষিক্ত হন । পরবর্তীতে ১৬১৪ সালে সম্রাট মাংখামাং ( সম্বন্ধী ) কতৃক মংচপ্যাইং পার্বত্য অঞ্চলের জন্য । নিয়ােগপ্রাপ্ত হন এবং পার্বত্য অঞ্চলে আগমনের সময় সেই হাইসাওয়াদী রাজ্য থেকে আসা কালাদাং নামক স্থানে পুনর্বাসিত আত্মীয়সজনসহ আগ্রহী সৈন্যদেরকে পাবর্ত্য অঞ্চলে নিয়ে । আসা হয় । এই অভিবাসন প্রক্রিয়াটি সেই ১৬ শ শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যন্ত এপার থেকে ওপার অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে মায়ানমায় ( বার্মা ) এই অভিবাসন প্রক্রিয়া এখনাে বর্তমান । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশটির সংখ্যা বাঙালি মুসলমানরা কৌশলগতভাবে চট্টগ্রাম পার্বত , অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে , যা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে । [ 8 ] ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে সরকার ৪,০০,০০০ এরও বেশি বাঙালি মুসলমানকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে , [ ৩ ] প্রতিটি পরিবারকে ৫ একর জমি এবং বিনামূল্যে খাদ্য রেশন প্রদান করে । পরবর্তীতে বছরের পর । ধরে মারমা জনসংখ্যা কমে বিশেষ করে চট্টগ্রামের বান্দরবান , চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর জেলায় । ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে বাঙালি মুসলিম বসতি স্থাপনকারী ও | বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের উপর ১৫ টিরও বেশি গুরুতর গণহত্যা চালায় । [ ত সহিংসতা , সাম্প্রদায়িকতা এবং সামাজিক অস্থিরতার প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য ও বার্মায় ( বর্তমানে মায়ানমার ) পালিয়ে যায় । বাংলাদেশ সরকার জোরপূর্বক বাংলাদেশী সমাজে একীভূত করার মাধ্যম হিসেবে মারমাদেরকে বৌদ্ধধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে এবং বৌদ্ধ মন্দির ( কিয়াউং ) ধ্বংস করেছে । অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী অধিবাসীদের নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিয়মতান্ত্রিক বিবরণ নথিভুক্ত করেছে ।
৩.বাংলাদেশের মারমা নৃগােষ্ঠীর সামাজিক জীবনধারার বিবরণ :
মারমা জনগণের প্রধান পেশা কৃষি । জুমচাষ তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রাথমিক কৃষিজ প্রয়াস অবশ্য এর পাশাপাশি তারা পাহাড়ি অরণ্য থেকে গাছের পাতা , মূল এবং কন্দ সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে । মারমা জনগণের মধ্যে বসতবাড়ি - সংলগ্ন ভিটায় তৈরি , । চোলাই মদ তৈরি এবং মজুরি শ্রম । বস্ত্ৰতৈরি মারমা মেয়েদের মধ্যে একটি খুবই সাধারণ । কর্মকান্ড । জাতপােয়ে নামক পালা ও ইয়েনপােয়ে নামক নৃত্য হচ্ছে জনপ্রিয় বিনােদন । মারমা সমাজে জ্ঞানী গুণীজন এবং গীতিকারেরা বিদ্ গাইট ' ( ধর্মীয় শাস্ত্র , বিদাং ' ( জ্যোতিষশাস্ত্র ) প্রভৃতি হতে মারমাদের কাহিনী সংগ্রহ এবং তাদের নিজস্ব ধ্যান - ধারণার আলােকে সমাজের বাস্তব রূপ ও । কাহিনী তুলে ধরার মধ্য দিয়ে সংগীত ও গীতিনাট্য রচনা করেন । মারমা সংগীতের প্রধান প্রধান ধারাগুলি হলাে : কাপ্যা , চাগায়াঙ , সাখ্রাঙ , রদু :, লাঙ্গা , সাইঙ্গ্যাই , লুঙটি প্রভৃতি । যন্ত্রসমূহের মধ্যে সেইং ওয়েইং ( বৃত্তাকার বড় আকৃতির কাঠের ঢােল , কিয়ে ওয়েইং ছােট আকৃতির কাঠের টোল )।
এ সকল যন্ত্রের সাথে বার্মায় ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের মিল রয়েছে । মারমা বংশ এবং রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় এ দুটি সংজ্ঞার ক্ষে পার্থক্য রয়েছে । ভাই ও বােনকে একই রক্ত সম্পর্ক বা পিতৃপরিচয় ধরে গণনা করলেও তাদেরকে আবার বংশগত দিক থেকে পৃথক হিসাবে দেখা হয় । যেমন বংশের ক্ষেত্রে মেয়ে মায়ের বংশ এবং ছেলে সব সময় বাবার । বংশ পরিচয় লাভ করে । বিবাহ বিচ্ছেদে নারী এবং পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার রয়েছে , তথাপি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে কারবারি ( গ্রামপ্রধান ) অথবা হেডম্যান ( মৌজাব্য এলাকাপ্রধান ) -এর আদালতে ।মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে তিন স্তরবিশিষ্ট প্রথাগত । রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিদ্যমান । গ্রাম পর্যায়ের প্রশাসনিক প্রধান হলেন একজন কারবারি মৌজা পর্যায়ের প্রধান হলেন একজন হেডম্যান সার্কেল প্রধান হলেন রাজা । গ্রামের কারবারি মৌজার হেডম্যান এবং সার্কেল । প্রধানের মূল দায় - দায়িত্ব হলাে জুম ট্যাক্স সংগ্রহ করা । এর পাশাপাশি তাদের ওপর নিজ নিজ প্রশাসনিক স্তরে বিরােধ নিষ্পত্তি , রায় প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিবিধ সামাজিক সাংস্কৃতিক দায় - দায়িত্ব অর্পিত ।
৪.মনিপুরী নৃগােষ্ঠীর উৎপত্তি ও পরিচয় :
-- অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক , রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের শিকার হয়ে এবং যুদ্ধজনিত কারণে ভারতের উত্তর - পূর্বাঞ্চলীয় মণিপু , রাজ্যের অধিবাসীরা দেশত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে । পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলায় , ত্রিপুরা রাজ্যে , পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মণিপুরী অভিবাসন ঘটে । বার্মা মণিপুর যুদ্ধের সময় ( ১৮১৯-১৮২৫ ) তৎকালীন মণিপুরের রাজা চৌরজিৎ সিংহ , তার দুই ভাই মারজিৎ সিংহ ও গম্ভীর সিংহসহ সিলেটে আশ্রয়গ্রহণ করেন । যুদ্ধ শেষে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই স্বদেশে ফিরে যায় , কিন্তু বহু মণিপুরী তাদের নতুন স্থানে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায় । বাংলাদেশে আসা মণিপুরীরা । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা , ময়মনসিংহের । দুর্গাপুর , ঢাকা । মণিপুরী পাড়া এবং প্রধানত বৃহত্তর সিলেটের বিভি স্থানে বসতি গড়ে তােলে ।। প্রায় দেড়শত বছর ধরে ( আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রি : থেকে ) পালিত হয়ে আসছে । কার্তিকের পুর্ণিমা তিথিতে দুরদুরান্তের লক্ষ লক্ষ ভক্ত - দর্শক সিলেটের মৌলবীবাজার জেলার । কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডবের এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষনে ছুটে আসেন
৫.বাংলাদেশে মনিপুরী নৃগােষ্ঠীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিবরণ :
মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী । মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলাে মণিপুরী যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত । মণিপুরীদের মধ্যে ঋতুভিত্তি আচার অনুষ্ঠান বেশি । বছরের শুরুতে হয় মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের বিষু এবং মৈতৈদের চৈরাউবা উৎসব । আষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ও কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মন্ডপগুলােতে বৈষ্ণব কবি । জয়দেবের গীতগােবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয় । কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন - শ্ৰবন । এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা । অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত । শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরন বা রাসপুর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে বর্তমানে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার , সিলেট , সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় মণিপুরী জনগােষ্ঠীর লােক বাস করে । বসন্তে দোলপূর্ণিমায় মণিপুরীরা আবির উৎসবে মেতে উঠে । এসময় পালাকীৰ্ত্তনের জনপ্রিয় ধারা " হােলি " পরিবেশনের মাধ্যমে মণিপুরী তরুণ তরুণীরা ঘরে ঘরে ভিক্ষা সংগ্রহ করে । এছাড়া খরার সময় বৃষ্টি কামনা করে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বৃষ্টি ডাকার গান পরিবেশন করে থাকে ।
এখনাে মণিপুরী মৈতৈদের অনেকে এই ধর্মের অনুসারী । মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের একাং মধ্যের " আপােকপা " পূজার প্রচলন রয়েছে । অষ্টাদ শতাব্দীতে মণিপুরীরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয় । তা হলে অনুমান করা যায় বিষ্ণুপুরিয়া জনগােষ্ঠীর সৃষ্টি অষ্টাদশ শতাব্দীর পরে ।। হাতে বােনা কাপড় তৈরীতে মণিপুরীরা খুবই দক্ষ । নিজেদের কাপড় তারা নিজেরাই তৈরি করে থাকে । প্রায় প্রতিটি ঘরেই তাঁত রয়েছে । মণিপুরী হস্তশিল্প বিশ্বময় সমাদৃত । মণিপুরীদের বােনা তাঁতের শাড়ি , গামছা , চাদর , ব্যাগ ইত্যাদি অন্যান্য জাতির মধ্যেও সমান জনপ্রিয়।
২০২১ সালের এইচএসসি ৬ষ্ট সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান (২য় পত্র) এসাইনমেন্ট সমাধান /উত্তর
Tag: এইচএসসি এসাইনমেন্ট সমাধান/উত্তর ২০২১ সালের সমাজবিজ্ঞান (৬ষ্ট সপ্তাহ) এসাইনমেন্ট -৪, ২০২১ সালের এইচএসসি ৬ষ্ট সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান (২য় পত্র) এসাইনমেন্ট সমাধান /উত্তর, বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠী এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)