পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা - পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন | Poribesh Songrokhone Bonayon Rochona


Any business enquiry contact us

Email:- Educationblog24.com@gmail.com


পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা - পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন,  Poribesh Songrokhone Bonayon Rochona, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন বলতে কি বোঝায়, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা

ভূমিকা : 

“ অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান । প্রাণের প্রথম জাগরণে তুমি , বৃক্ষ , আদিপ্রাণ । ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলােকের প্রথম বন্দনা , ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ পরে আনিলে বেদনা নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে । ”
সভ্যতার আদি যুগে মানুষ একদিন অরণ্য প্রকৃতির নিবিড় ছায়ায় সহস্র বিটপীর স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছে । কিন্তু সভ্যতা যতই সম্প্রসারিত হয়েছে মানুষ ততই প্রকৃতির জগৎ থেকে নির্বাসিত হয়েছে । মানুষ নিজ হাতে নির্মূল করেছে তার শৈশব সভ্যতার সঙ্গী তরুরাজিকে । সভ্যতা যেমন আমাদের দিয়েছে প্রচুর তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু । বৃক্ষের সঙ্গে আমরা আজ আত্মীয়তা হারিয়ে ফেলতে চলেছি অথচ এই বৃক্ষই আমাদের প্রাণের উৎস । বৃক্ষরােপণ তথা বনায়ন শুধু প্রকৃতিকে ভালােবাসার স্মারক নয় , এ হল মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার এক মহৎ প্রয়াস ।

বনায়ন ও পরিবেশ : সভ্যতার আদিকাল থেকেই মানুষ গাছপালা ও তৃণলতার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে । এ বৃক্ষলতাই মানুষের খাদ্য বস্ত্র ও বাসস্থান যুগিয়েছে । জীবন ও প্রকৃতির অস্তিত্ব টিকে আছে বৃক্ষের ওপর । আগে এই বৃক্ষরাজি মানুষকে প্রাকৃতিকভাবেই বেষ্টন করে রাখত কিন্তু বৃক্ষনিধন করে আজ পৃথিবী এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে মানুষকেই বৃক্ষরােপণ করতে হচ্ছে । আর এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় বনায়ন । জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে এর কোনাে বিকল্প নেই । বনায়ন আর সুস্থ - সুন্দর পরিবেশ দুটি শব্দ যেন পরস্পরের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত । বনায়ন ছাড়া পরিবেশের অস্তিত্ব ও সৌন্দর্য কল্পনাই করা যায় না । 

পরিবেশ বিপর্যয়ে বর্তমান বিশ্ব : বর্তমান সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি , কল কারখানার প্রসার , রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা ও বনজ সম্পদ নিঃশেষ করার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । এ পরিবেশ বিপর্যয়কে বিজ্ঞানীগণ গ্রীন হাউস ইফেক্ট গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া নামে চিহ্নিত করেছেন । এই প্রতিক্রিয়ার দরুণ সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলাে সরাসরি পৃথিবীতে আসছে । অকাল বন্যা , অনাবৃষ্টি , অতিবৃষ্টি , ঘূর্ণিঝড় , জলােচ্ছ্বাস , তুষারপাত , ভূমিধ্বস , প্রভৃতির মতাে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে । এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় রােধকল্পে যে সমস্ত কর্মসূচি নেওয়া প্রয়ােজন তাদের মধ্যে বনায়ন অন্যতম । আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন যে , পানি এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সম্পর্ক রয়েছে যাকে ইকোসিস্টেম বলে । এর ব্যতিক্রম ঘটলে শুধু প্রকৃতি নয় , গােটা পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । আর বর্তমান বিশ্ব সেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই শিকার । 
বাংলাদেশের বনভূমি : আমাদের দেশে একসময় যথেষ্ট বন - বনানী ছিল । কিন্তু কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । অধিক জনসংখ্যার চাপে এবং বসতবাড়ি তৈরির প্রয়ােজনে বন কাটা হচ্ছে । ফলে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রয়ােজনের তুলনায় যে পরিমাণ বনভূমি থাকা প্রয়ােজন তা নেই । একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মােট ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়ােজন । কিন্তু সেখানে আমাদের দেশে মােট ১৬ শতাংশ বনভূমি রয়েছে । বিশ্ববিখ্যাত সুন্দরবন , ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় , চট্টগ্রাম , পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনভূমি আমাদের দেশের এক বিশাল সম্পদ । তবে বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ বনভূমি রয়েছে তা যদি আর ধ্বংস না করা হয় , তবে তা প্রয়ােজনীয় বনভূমিতে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না । 

বাংলাদেশে বনায়নের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা : মানুষ আজ অরণ্য বিনাশের মাধ্যমে পৃথিবীতে আহ্বান করে আনছে মরুভূমি । অরণ্যই মরুভূমিকে প্রতিরােধ করতে পারে , অরণ্যই মরুভূমিকে শ্যামল - স্নিগ্ধ , স্নেহময়ী জননীর মূর্তি দান করতে পারে । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নাগরিক সভ্যতার ইট , কাঠ , পাথরের কৃত্রিমতায় ক্লান্ত হয়ে আবেগকম্পিত কণ্ঠে প্রার্থনা করেন 
“ দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর নাও যত লৌহ , লােষ্ট্র , কাঠ ও প্রস্তর হে নব সভ্যতা , হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী দাও ফিরে তপােবন , পুণ্যচ্ছায়া রাশি , গ্লানিহীন অতীতের দিনগুলাে । " 

উন্নয়নশীল বিশ্বের শতকরা তিন ভাগ ইন্টারনাল রিটার্ন ও শতকরা ৭০ ভাগ জ্বালানি শক্তির জন্য বৃক্ষ বা কাঠের ওপর নির্ভরশীল এবং এ চাহিদা পূরণের জন্য কোনাে দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনজসম্পদ । অত্যাবশ্যকীয় । অর্থনৈতিক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসম্পদের পরিমাণ মােট ভূ - ভাগের ৯.৩ শতাংশ এবং বনবিভাগের মতে ০.০৯ শতাংশ , যা জনবহুল বাংলাদেশের জন্য মােটেও পর্যাপ্ত নয় । বাংলাদেশের মাথাপিছু কাঠ ব্যবহারের ২.৬৮ ঘনফুট । কিন্তু বর্তমানে কাঠের চাহিদার মাত্র ৪৮.৫ শতাংশ নিজৰ বনভূমি থেকে পূরণ করা সম্ভব ।

পরিবেশ রক্ষায় বনায়ন : প্রখ্যাত পরিবেশবিজ্ঞানী মাইকেল মালিকফার ইস্টার্ন রিভিউতে একটি মানচিত্রের সাহায্যে দেখিয়েছেন যে আগামী শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক - দশমাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে । সাম্প্রতিককালে একজন খ্যাতনামা পরিবেশবিজ্ঞানীর ভাষ্য , ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনের ফলে ২০৩০ সালে এদেশের ৮০ ° থেকে ১০ ° সে . তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে । আমাদের গড় তাপমাত্রা ৩৫ ° -৩৬ ° সে . বেড়ে ৪৫ ° -এ দাঁড়াবে । কাজেই আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়নের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরােপ করা উচিত । বাংলাদেশের নামের সাথে যে সুজলা - সুফলা , শস্য - শ্যামলা বা রূপসী বাংলা নাম জড়িয়ে আছে সে নামটিই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না যদি আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে বা বনায়নে উদ্যোগী না হই । পরিবেশ বিপর্যয় রােধে তাই বনায়নের কোনাে বিকল্প আমাদের কাছে নেই । 

বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি : বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন গ্রামীণ জনপদে আর্থ - সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমােচনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে । সে সাথে সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা , জলবায়ু পরিবর্তন উপশম ও অভিযােজনে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে । বনবিভাগ ষাটের দশকের শুরুর দিকে বন - সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বপ্রথম বনায়ন কর্মসূচি জনগণের কাছে নিয়ে । যায় । ২০০০ সালে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমকে ১৯২৭ সালের বন আইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আইনি কাঠামােতে নিয়ে আসে । সামাজিক বনায়নকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ২০০৪ সালে সরকার বিধিমালা প্রণয়ন করে এবং ২০১০ সালে সংশােধনী আনা হয় । বনবিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় এ যাবৎ প্রায় ৪৪৪০৮ হেক্টর উডলট বাগান , ১০৬২৬ হেক্টর কৃষি বাগান , ৬১৭৩৯ কিলােমিটার স্ট্রিপ সৃজন করা হয়েছে । এছাড়া বিগত ৪ বছরে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড আওতাভুক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী , স্বল্পমেয়াদী ও নন । ম্যানগ্রোভ ২১৫৫ হেক্টর ব্লক বনায়ন এবং সড়ক রেলপথ ও বাঁধ সংযােগ সড়কে ২৬৪১ কি.মি. স্ট্রিপ বনায়ন । করা হয়েছে । সৃজিত বাগানে প্রায় ৫ লক্ষ উপকারভােগী সম্পৃক্ত আছে । সারাদেশে ব্যাপক বনায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ৬৩ হাজার চারা বিক্রয় ও বিতরণ করা হয়েছে । সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব হয়েছে ২০৫ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮ শত ৭০ টাকা । 
উপসংহার : দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য বৃক্ষরােপণ অভিযান একটি বিরাট পদক্ষেপ । বৃক্ষরােপণ অভিযান । তথা বনায়ন সফল হলে দেশের হৃত গৌরবকে শস্য - শ্যামলিমার দেশ এই বাংলাকে আবার চিরসবুজ শ্যামল । করা যাবে । তাই আমরা বনায়ন অভিযানের মাধ্যমে লাগাব বৃক্ষ - তাড়াব দুঃখ- দেশকে করব সমৃদ্ধ ।

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন

Poribesh Songrokhone Bonayon Rochona


Tag: পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন রচনা - পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন,  Poribesh Songrokhone Bonayon Rochona, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন বলতে কি বোঝায়, পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন অনুচ্ছেদ রচনা, রচনা - পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন


Any business enquiry contact us

Email:-Educationblog24.com@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)


                               

 

কিভাবে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করবেন এবং পাসওয়ার্ড কি দিবেন? বিস্তারিত জেনে নিন



Previous Post Next Post