আসছালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক সবাই কেমন আছেন। আসা করি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। যা বর্তমান সময়ে আমরা সবাই আসক্ত। সেটা হলো গান শোনা। ছোট বাচ্ছা থেকে নিয়ে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই গান শুনতে ভালোবাসে। কিন্তু এই গান সম্পর্কে আমাদের ইসলামে কি বলা হয়েছে অনেকে জানি না।তাই এই পোস্টে তোমাদের ইসলামে গান শোনা হারাম না হালাম এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো দলিল প্রমান সহ। আসা করি তোমাদের গান বাজনা নিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
ইসলামে মিউজিক কি হারাম
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা ও শোনা হারাম ও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভূক্ত। তা যে কোন গানই হোক না কেন। যেমনঃ
নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানই হোক না কেন। তবে, বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত আল্লাহ তায়ালার গুনাবলী বিষয়ে হামদ, না’ত, কাসীদা, গজল ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়েয রয়েছে।
গান বাজনার দলিল
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত হচ্ছেঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
"আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে।" ***সূরা লুকমানঃ আয়াতঃ ৩১:৬।
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদীছ’ অবলম্বন করে, সে দোজখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই তা হারাম।
আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ "তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত করো।" ***সূরা বনি ইসরাঈলঃ আয়াতঃ ১৭:৬৪।
এ আয়াত-এর ব্যাখ্যায় তাফসীর ইবনে জারীর-এর ১৫/৭৬ পৃষ্ঠায় আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন যেঃ
“হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত আয়াত সম্বন্ধে বলেন, শয়তানের শব্দ অর্থ হচ্ছে ক্রীড়া ও সঙ্গীত বা গান-বাজনা।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, শয়তানের শব্দের অর্থ যে কোন আহ্বানকারী আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণের দিকে আহ্বান করে। এ মতগুলোর মধ্যে সমধিক ছহীহ এই যে, যে কোন শব্দে শয়তানের দিকে, এর কার্য্যরে ও আদেশ পালনের দিকে আহ্বান করা হয় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বন্দিগির আহ্বানের বিপরীত হয়, তা শয়তানের শব্দের অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে বুঝা যায় যে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করেছেন, অর্থাৎ সঙ্গীতও এর অন্তর্গত। হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ব্যাপক অর্থ সমর্থন করেছেন।"
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কিত অপর আয়াত হচ্ছে সূরা আন-নাজম-এর ৬১নং আয়াত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
“তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছো বা তোমরা কি এ কথার (কুরআন শরীফ-এর) উপর আশ্চর্য্যান্বিত হচ্ছো ও হাস্য করছো এবং ক্রন্দন করছো না, অথচ তোমরা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করছো?” ***সূরা আন-নাজমঃ আয়াতঃ ৫৩:৬১।
এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে তাফসীর ইবনে জারীর, ২৭ খণ্ড, ৪৩/৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যেঃ
“হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম سامدون ‘সামিদুন’ (সামুদ ধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে)। এর অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা, যখন কাফিরেরা কুরআন শরীফ শ্রবণ করত, সঙ্গীত বা গান-বাজনা করত ও ক্রীড়া কৌতুকে লিপ্ত হত, এটা ইয়ামেনবাসীদের ভাষা।”
উক্ত আয়াত-এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে দুররে মানছুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যেঃ “হযরত আব্দুর রজ্জাক’ ফারইয়াবি, আবূ উবাইদ, আব্দ ইবনে হুমাইদ, ইবনে আবিদ্দুনইয়া, বাজ্জাজ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনজির, ইবনে আবী হাতেম এবং বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম وَأَنتُمْ سَامِدُونَ এর (ব্যাখ্যায়) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, তিনি বলেন, ইয়ামেনবাসীদের ভাষায় (সামুদ শব্দের) অর্থ- সঙ্গীত। যখন কাফিরেরা কুরআন শরীফ শ্রবণ করতো, সঙ্গীত ও ক্রীড়া-কৌতুক করতো।”অতএব, এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সঙ্গীত বা গান-বাজনা হচ্ছে কাফিরদের খাছ আমল। যা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম।"
গান বাজনার ভয়াবহ পরিণতি
গান-বাজনার ক্ষতিকর দিকসমূহঃ
ইসলাম কোন জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোন কিছু না থাকলে তাকে হারাম করেনি। গান ও বাজনার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহিঃ) এ সম্বন্ধে বলেছেনঃ বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপঃ
মদ যেমন মানুষের ক্ষতি করে, বাদ্যও মানুষের সেই রকম ক্ষতি করে। যখন গান-বাজনা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হয়। আর তখন তারা ফাহেশা কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়। তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের কতল করা নিষেধ তাদেরকেও কতল করতে থাকে। যেনা করতে থাকে। যারা গান-বাজনা করে তাদের বেশীর ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোষ দেখা যায়। তাদের বেশীর ভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় ও হাততালি দেয়। অথচ মুখ দিয়ে শিস দেওয়া ও হাত তালি দেওয়া হারাম (সূরা আনফালঃ আয়াতঃ ৮:৩৫)।
শিরকের নিদর্শনঃ
তাদের বেশীর ভাগই তাদের শায়খ (পীর) অথবা গায়কদের আল্লাহরই মতই ভালবাসে অথবা আরো অধিক।
ফাহেশার মধ্যে আছেঃ
গান হল যেনার রাস্তা স্বরূপ। এর কারণেই বেশীর ভাগ ফাহেশা কাজ অনুষ্ঠিত হয় গানের মজলিসে। ষেখানে পুরুষ, বালক, বালিকা ও মহিলা চরম স্বধীন ও লজ্জাহীন হয়ে পড়ে। এভাবে গান শ্রবন করতে করতে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। তখন তাদের জন্য ফাহেশা কাজ করা সহজ হয়ে দাড়ায়, যা মদ্যপানের সমতুল্য কিংবা আরও অধিক।
কতল বা হত্যাঃ
অনেক সময় গান শ্রবণ করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে কতল করে ফেলে। যারা গান-বাজনা করে ও শোনে তারা মূলতঃ শয়তানের সংগী হয়ে যায়। যেমন,
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। আর নিশ্চয়ই তারাই (শয়তান) মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়। অথচ মানুষ মনে করে তারা হিদায়েত প্রাপ্ত।"
***সূরা যূখরুফঃ আয়াতঃ ৪৩:৩৬-৩৭।
আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দেন, যাতে তারা আরও গোমরাহ হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
"বল, যে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তাকে পরম করূণাময় প্রচুর অবকাশ দেবেন।"
***সূরা মারইয়ামঃ আয়াতঃ ১৯:৭৫।
শয়তান যে তাদের সাহায্য করে, এতে আবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, সুলাইমান (আঃ) এক জ্বিনের নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন- রাণী বিলকিসের সিংহাসন উঠিয়ে আনার জন্য।
এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
"এক শক্তিশালী জ্বিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দিব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।"
***সূরা নমলঃ আয়াতঃ ২৭:৩৯।
বর্তমান জামানায় বেশীর ভাগ গান হয় বিয়ের মজলিসে অথবা অন্য কোন উৎসবে, রেডিও ও টেলিভিশনে। এগুলোর বেশীর ভাগই ভালবাসা, শাহওয়াত, চুমু দেখা সাক্ষাৎ ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে রচিত। তাতে থাকে মুখের, কপালের এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের বর্ণনা, যা যুবকদের মনে শাহওয়াত জাগিয়ে তোলে, আর তাদের ফাহেশা কাজ ও যেনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। আর তাদের চরিত্র নষ্ট করে।যখন গায়ক গায়িকারা গান বাজনার নামে একত্রিত হয়, তখন ঐ সমস্ত ধন দৌলত ব্যয় হয়, যা সংস্কৃতির নামে জাতীয় তহবিল হতে চুরি করা হয়। তারপর ঐ ধন দৌলত নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা যেয়ে বাড়ী গাড়ী ইত্যাদি খরিদ করে। তারা তাদের অশ্লীল গান বাজনা দিয়ে জাতীয় চরিত্র নষ্ট করে দেয়। তাদের অশ্লীল ও নগ্ন ছবি দিয়ে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করে। ফলে, আল্লাহকে ছেড়ে তারা তাদেরকে ভালবাসতে থাকে।
যে সমস্ত গান শ্রবণ করা জায়েযঃ
ঈদের গান শ্রবণ করাঃ
আয়েশা (রাদিঃ) হতে বর্ণিতঃ
"একদা রাসূল (সাঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর (রাদিঃ) তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।"
বুখারী।
দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।"
আহমাদ।
কাজ করার সময় ইসলামী গান শ্রবণ করা, যাতে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ঐ গানে যদি দুয়া থাকে। এমনকি রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত ইবনে রাওয়াহা (রাদিঃ) নামক সাহাবী কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর সাথীদেরকে খন্দকের যুদ্ধের সময় পরিখা খনন করতে উদ্ধুদ্ধ করতেন এই বলে যে, হে আল্লাহ কোনই জীবন নেই আখেরাতের জীবন ব্যতীত। তাই আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করনি। তখন আনছার ও মুহাজিরগণ উত্তর দিলেনঃ আমরাই হচ্ছি ঐ ব্যক্তিবর্গ যারা রাসূলের নিকট বায়আত করেছি জিহাদির জন্য যতদিনই আমরা জীবিত থাকিনা কেন।
আর রাসূল (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে যখন খন্দক (গর্ত) খনন করছিলেন, তখন ইবনে রাওয়াহা (রাদিঃ) এই কবিতা আবৃত্তি করছিলেনঃ আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ না থাকতেন তাহলে আমরা হেদায়েত পেতাম না। আর সিয়ামও পালন করতাম না, আর সালাতও আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর সাকিনা (শান্তি) নাযিল করুন। আর যখন শত্রুদের মুকাবিলা করব তখন আমাদের মজবুত রাখুন। মুশরিকরা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে, আর যদি তারা কোন ফিৎনা সৃষ্টি করে, তবে আমরা তা ঠেকাবই। বারে বারে আবাইনা শব্দটি তারা উচ্চ স্বরে উচ্চারণ করছিলেন।ঐ সমস্ত গান, যাতে আল্লাহর তাওহীদের কথা আছে অথবা রাসূলের (সাঃ) মহব্বত ও তার শামায়েল আছে অথবা যাতে জিহাদে উৎসাহিত করা হয় তাতে দৃঢ় থাকতে অথবা চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়। অথবা এমন দাওয়াত দেয়া হয় যাতে মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। অথবা যাতে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। অথবা এই জাতীয় অন্যান্য কথা যা সমাজকে উপকুত করে দ্বীনি আমলের দিকে কিংবা চরিত্র গঠনের জন্য।
ঈদের সময় ও বিয়ের সময় কেবল মাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। যিকরের সময় এটার ব্যবহার ইসলাম কখনই দেয়নি। রাসূল (সাঃ) যিকরের সময় কখনই উহা ব্যবহার করেননি। তাঁর পরে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমগণ কখনই তা করেননি। বরং, ভণ্ড সুফি পীররা তা মুবাহ করেছে নিজেদের জন্য। আর যিকরের দফ বাজানোকে তারা সুন্নত বানিয়ে নিয়েছে। বরং উহা বিদআত।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন সংযোজন করা হতে বিরত থেকো। কারণ, প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।" তিরমিযী।
সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"আমি 'বাদ্য-যন্ত্র' ও 'মুর্তি' ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।"
আহমদ ও আবূ দাঊদ।
গান-বাজনা সম্পূর্ন ভাবে নাজায়িয, হারাম ও নিষিদ্ধ। কেননা, গান দ্বারা অন্তরে নিফাক বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ
পানি দ্বারা ফসল বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অন্তরে যিনার চাহিদা সৃষ্টি হয় এবং মানুষ বিপথগামী হয়।
প্রমানঃ
সুরা লোকমানঃ আয়াতঃ ৬; তাফসীর আহমদিয়্যাহঃ ৪০০ পৃঃ ইমদাদুল মুফতীন, তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআনঃ পৃঃ ১০৫২, ১০০৩পৃঃ; দুররে মুখতার মাআশ শামী ৬:৩৪৯; ফাতা্ওয়ায়ে রাহমানিয়াঃ ১ম খন্ড; ১৬২পৃঃ।
সাহাবী ও তাবেঈদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথাঃ
১) নিফাক-এর উৎস।
২) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী।
৩) মস্তিষ্কের উপর আবরণ।
৪) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী।
৫) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী।
৬) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী এবং
৭) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।
***ইগাছাতুল লাহফানঃ ১:১৮৭।
চার ইমামের ভাষ্যঃ
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহিঃ) এক ও অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক (রহিঃ)-কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেনঃ
‘কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।’
***কুরতুবীঃ ১৪/৫৫।
ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) বলেছেন যেঃ
‘গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।'
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।’
***ইগাছাতুল লাহফানঃ ১/১৭৯; কুরতুবীঃ ১৪/৫৫।
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লিখেছেন যেঃ
‘বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।’
***আহসানুল ফাতাওয়াঃ ৮/৩৮৮।
ইমাম শাফেয়ী (রহিঃ) শর্ত সাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।
***জামে তিরমিযীঃ ১০৮৯; সহীহ বুখারীঃ ৫১৪৭, ৫১৬২।
মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।
***ফাতহুল বারীঃ ৯/২২৬।
গান, গায়ক-গায়িকা, ঢোল-তবলা, বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র এবং এর ব্যবসা ও চর্চা হারাম
ঢোল-তবলা এবং বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র হারাম।
তাই যারা শিল্পী বা গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা, শ্রোতা এবং দর্শক তারা সবাই সমান অপরাধী।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা জাতীয় বাদ্যযন্তকে হারাম করেছেন।
***আহমাদ, সিলসিলাহ সহিহাহঃ ১৭০৮, বায়হাকীঃ ২১৫২৯।
গান, গায়ক-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চা হারামঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
"তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোন কল্যাণ নেই। জেনে রেখো, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।"
***জামে তিরমিযীঃ ১২৮২; ইবনে মাযাহঃ ২১৬৮।
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরী হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিস অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেনঃ
"আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।"
***সুনানে ইবনে মাযাহঃ ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৬৭৫৮।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিঃ) বলেছেনঃ
'পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে; তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।'
***ইগাছাতুল লাহফানঃ ১:১৯৩; তাফসীরে কুরতুবীঃ ১৪:৫২।
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
"আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।"
***সহীহ বুখারী।
এ বিষয়ে আরও দলিল থাকলে মেহেরবানী করে মন্তব্য করুন।
নীচের লেখাটি দ্বীনি ভাই শাহাব বাবুর পোষ্ট থেকে সংগৃহিতঃ
‘লাহুয়াল হাদীস’ এবং ‘শয়তানের ডাক’ কি?
“এই (ক্বুরানুল কারীম) মানুষের জন্যে একটি মহা সংবাদনামা, যাতে করে মানুষ এর দ্বারা ভীত হয়। আর যাতে তারা জেনে নেয় যে, একক উপাস্য একমাত্র তিনিই (আল্লাহ); এবং যাতে বুদ্ধিমানরা এর (আয়াতগুলো) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।” [সুরা ইব্রাহীমঃ ৫২]
বর্তমান যুগে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে, যাদের টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার বা মিউজিক প্লেয়ারে গান-বাজনা বাজেনা।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে বেনামাযী, বেদ্বীন নারী-পুরুষের পাশাপাশি অনেক নামাযী লোকেরাও এই শয়তানি ধোকায় পড়ে বোকা বনে আছেন। সবচাইতে বিপদের কথা হছে এক শ্রেণীর গাফেল বাবা-মা ২-৩ বছরের ছোট ছোট শিশুদেরকে জীবনের শুরু থেকে গান-বাজানায় আসক্ত করে শুরুতেই তাদের অন্তরটাকে নষ্ট করে ফেলছেন। আমাদের ঈমান এতো দুর্বল হয়ে গেছে যে, সামান্য গান-বাজনার ধোঁকা থেকে বেড়িয়ে আমরা আসতে পারছিনা...তাহলে আমরা কি করে আশা করতে পারি যে, গান-বাজনা থেকে হাজার গুণ কঠিন দাজ্জালের ফেতনায় ঈমান ধরে রাখতে পারবো? আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করুন।
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্যে ‘লাহুয়াল হাদীস’ (অবান্তর/বেহুদা কথাবার্তা) সংগ্রহ করে অন্ধভাবে, এবং আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” [সুরা লুকমানঃ ৬]
‘লাহুয়াল হাদীস’ কি?
প্রখ্যাত সাহাবী আ’ব্দুল্লাহ ইবনু মাসউ’দ রাদিআল্লাহু আ’নহু বলেন,
“আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, (এই আয়াতে উল্লেখিত) ‘লাহুয়াল হাদীস’ (অবান্তর-কথাবার্তা) কথার অর্থ হচ্ছে গান।”
‘ইবলীসের আওয়াজ’।
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন,
“(হে ইবলীস!) তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের (পথভ্রষ্ট লোকদের) মধ্য থেকে যাকে পারিস তাকে পদস্খলিত কর।” [সুরা ইসরাঃ ৬৩]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী আ’ব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু আ’নহুমা বলেন,
“যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহবান করে, সেটাই হচ্ছে ইবলীসের আওয়াজ।”
বিখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“ইবলীসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্য-যন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে।”
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে মানুষকে আহবান করে, তার মধ্যে গান-বাজনা সবচাইতে সেরা। এজন্যেই গান-বাজনাকে ‘ইবলিসের আওয়াজ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।”
[ইগাসাতুল লাহফানঃ ১/১৯৯]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি (হারাম কাজকে) হালাল মনে করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’।
রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [সহীহ বুখারী, খণ্ড ৭, বুক ৬৯, হাদীস নং-৯৪]
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
“কেবলমাত্র ফাসিক (পাপীষ্ঠ) লোকেরাই তা করতে পারে।” [কুরতুবীঃ ১৪/৫৫]
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি সে হল একজন আহম্মক (নির্বোধ লোক) । তিনি আরো বলেছেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক (পাপীষ্ঠ)। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
[ইগাছাতুল লাহফানঃ ১/১৭৯; কুরতুবীঃ ১৪/৫৫]
কার মৃত্যু কখন চলে আসে কোন গ্যারান্টি নাই। মোবাইল, কম্পিউটার আল্লাহর নিয়ামত। এই নিয়ামতকে শয়তানের রাস্তায় (গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার) পেছনে ব্যয় করবেন না। বরং এইগুলো দিয়ে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। জাহান্নামের শাস্তি অতি কঠিন। আজকে এই মুহূর্তে মোবাইল কম্পিউটার থেকে যাবতীয় গান-বাজনা, অশ্লীল ছবি-ভিডীও ডিলিট করুন। সাময়িক মজা ভোগ করে অনন্তকালের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করার মতো বোকামি আমরা যেন না করি।
গান বাজনার সাথে জড়িতদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেওয়া হবেঃ
বিয়ের প্রোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই আজকাল ব্যপকভাবে গান বাজনার প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব প্রোগ্রামে এতোটাই ঘৃণ্য কার্যকলাপ হচ্ছে যে, আজকাল মুসলিম মেয়েরাও এসব অনুষ্ঠানে নাচানাচি করছে। গান বাজনা, নাচ এই সবের সাথে যারা জড়িত তাদের ভয় করা উচিত আল্লাহ তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দিতে পারেন (নাউযুবিল্লাহ)!পাপ কাজকে বান্দাদের জন্য আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে দেওয়া হয়েছে, কারণ এই পাপ কাজের আড়ালেই রয়েছে “জাহান্নাম”।
পাপ কাজ করে যদি সাময়িক আনন্দ না থাকতো তাহলে হয়তো দুনিয়ার কেউই পাপ কাজে লিপ্ত হতো না।
কিন্তু এই সাময়িক আনন্দের পেছনে রয়েছে অনেক দুঃখ। আর জাহান্নামতো হচ্ছে উত্তপ্ত অগ্নি। তবে অনেক পাপ আছে যেগুলোর শাস্তি দুনিয়াতেই দেওয়া হয়।
এ রকম একটা উদাহরণ হচ্ছে জেনা-ব্যভিচারের শাস্তি এইডস। এইডস যে কি ভয়ংকর আযাব তা জানার জন্য আপনারা কোন এইডস রোগী দেখে আসতে পারেন। তার রোগের কষ্ট না, শুধু তার মানসিক কষ্টটাই যে কি মারাত্মক.....লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
গান-বাজনা, নৃত্য এগুলোর কি কোনো শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে??উত্তর হচ্ছে, হ্যা হবে। এরকম অনেকের নিকৃষ্ট শাস্তি দুনিয়াতেই হবে। আর পরকালের শাস্তিতো আরো মারাত্মক।
আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ
“ইন্না বাতসা রাব্বিকা লা'শাদিদ”।
নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
***সুরা আল-বুরুজ।
কি শাস্তি হবে বলার আগেই বলে নেই প্রচলিত গান-বাজনা/হলুদ/পার্টি ইত্যাদি প্রোগ্রামগুলোতে যা থাকেঃ
১) উদ্দাম-উশৃংখলার গান-বাজনা, যা মানুষকে উন্মত্ত করে দেয়। এগুলো মানুষকে এতোটাই উন্মত্ত করে দেয় যে, নারীরা লজ্জা-শরম ভুলে নিজেদেরকে পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেনা।
২) নর্তকীঃ
পুরুষদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ফাহেশা নারী। টাকার গোলাম কিছু প্রফেশনাল নারী, যারা আসলে একজন পতিতার চেয়ে বেশি কিছুনা, এদেরকে নিয়ে আসা হয় লম্পট-বেদ্বীন পুরুষদেরকে আকর্ষণ করার জন্য। আর পরিবেশ এমন হয়, অনেক সাধারণ মেয়েরাও এই সমস্ত নর্তকীদের সাথে পুরুষদের মনোরঞ্জনে নেমে পড়ে।
৩) গায়িকাঃ
কেয়ামতের একটা লক্ষণ, গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। কারণ নারীদের কন্ঠ লক্ষ লক্ষ যুবকের চরিত্রের শুদ্ধতা নষ্ট করে দিতে পারে।
৪) বিভিন্ন মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যঃ
এই পার্টিগুলো অনেক তরুণের নেশা ধরার স্থান। ফ্রীতে দামী নেশা দ্রব্য খেয়ে বাকি জীবন নেশার পেছনেই ধ্বংস করে।
কেয়ামতের ছোট যে লক্ষণগুলো হাদীসে বলা হয়েছে তার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
এরকম দুইটা আশ্চর্য নিদর্শন স্মরণ করিঃ
১) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“তোমরা একে-অপরকে হত্যা করবে। এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশি, তার ভাইয়ের ছেলে এবং আত্মীয়দেরকে হত্যা করবে।”
***ইবনে মাজাহঃ ২/৩২৯৮।
কিছুদিন আগে পত্রিকাতে দেখলাম নিকটাত্মীয় নয় বরং এক নরপশু তার নিজের বাবাকে হত্যা করেছে। এর আগেও বহু খবর এসেছে ছেলে-মেয়ে বাবা বা মাকে হত্যা করেছে। আর এক মেয়েতো তার নিজের বাবা-মা উভয়কে হত্যা করে সবার কাছেই পরিচিত হয়ে গেছে।
ব্যপারটা ২-১টা না, এমন অনেকই ঘটছে বর্তমান অধঃপতিত মুসলিম সমাজে।
২) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেনঃ
“তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে জেনা করে তাহলে তোমরাও তা করবে (নাউযুবিল্লাহ)।”
***বাযযারঃ ১২১০৫।
এই হাদীসের বাস্তবায়ন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মায়ের সাথে না হলেও নিজের পরিবারের সাথে জেনা/ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছে এমন কিছু নরপশুর কথা আমাদের জানা আছে। এছাড়া বিভিন্ন ফতোয়া ও ইসলামী জিজ্ঞাসার সাইটে এই সম্পর্কে বাস্তব ঘটনা নিয়ে ফতোয়াও জানতে চাওয়া হচ্ছে আজকালকার যুগে...ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কেয়ামত কবে হবে কেউ জানেনা, কিন্তু এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় খুব বেশি দেরী নেই।
যা হোক এবার আসি মূল আলোচনায়...গান বাজনার পার্টির শাস্তিঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“কেয়ামতের আলামত হচ্ছে (দ্বীনি) জ্ঞান উঠে যাওয়া, অজ্ঞতার সয়লাব হওয়া, মদ পান করা, ব্যভিচার ব্যপকতা লাভ করা।”
***মুসলিম, কিতাবুল ইলম।
শেষ জামানার লক্ষণ হচ্ছেঃ
“গান-বাদ্য, গায়িকা ও মদপানকে হালাল মনে করা হবে।”
ত্বাবারানি।
এসবগুলোই এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলোর শাস্তিঃ
“ভূমিধ্বসে ধ্বংস করে দেওয়া হবে...মানুষের আকৃতি পরিবর্তন করা হবে...।”
ত্বাবারানি।
কি আকৃতি পরিবর্তন করা হবে? মানুষকে শূকর ও বানরে পরিণত করে দেওয়া হবে। যেমন, পূর্বে ইয়াহুদীদেরকে করা হয়েছিলো।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের মাথার উপরে গান-বাজনা ও নারী-নৃত্য চলতে থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেবেন।” ইবনে মাজাহঃ ২/৩২৪৭।
বর্তমানে আমরা ঠিক এটাই দেখতে পাচ্ছিঃ
এনার্জি ড্রিংকস, স্পিরিচুয়াল ড্রিংকস, ইয়াবা, আফিম ইত্যাদি নামে নেশা করা হচ্ছে...মাথার উপরে মাইকে গান বাজনা হচ্ছে...স্টেজে নারীরা অশ্লীল বেহায়া নৃত্য করছে।
বেনামাযি, কাফের, মুশরেকদের সাথে অনেকে নামাযী, আধা হিজাবী, দুর্বল ঈমানদার ভাই-বোনও এতে জড়িয়ে পড়ছে।এদের শাস্তি স্বরূপ একদল লোকদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দেশে ইতিমধ্যে যে বিল্ডিং ধ্বসে মারাত্মক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে...নিঃসন্দেহে এগুলো আল্লাহর আজাব-গজবের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। এমন হওয়াও অসম্ভব না যে – গান, গায়িকা, মদ, জেনার প্রাদুর্ভাব হিসেবে – এগুলো সেই আজাবের অংশ, যা হাদীসে কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে!!!
হয়তো ভবিষ্যতে আরো এরকম বিল্ডিং বা মাটি ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এখনো বাকি রয়েছে...মানুষকে শুকর ও বানরে পরিণত করা। আল্লাহ তার নবী রাসুলদের যে ওয়াদা দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য। একদিন হয়তো এমন হবে, এরকম গান-বাজনা, মদ, অশ্লীল নারীদের নৃত্যের কোন প্রোগ্রামে মানুষেরা সারা-রাত আনন্দ ফূর্তিতে লিপ্ত থাকবে। আর সকাল বেলায় তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেওয়া হবে।
Tag:ইসলামে মিউজিক কি হারাম-গান বাজনার দলিল,গান শোনা হারাম না হালাল,ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম কেন,গান শুনলে কি গুনাহ হয়,গান বাজনার ভয়াবহ পরিণতি
Any business enquiry contact us
Email:-Educationblog24.com@gmail.com
(সবচেয়ে আগে সকল তথ্য,গুরুত্বপূর্ণ সকল পিডিএফ, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদেরGoogle News,FacebookএবংTelegram পেজ)